সালকিয়ার ইতিহাস

হাওড়া জেলার শতাব্দী প্রাচীন আধুনিকতার মোড়কে ইতিহাসের ছোঁয়া লাগানো জনপদে "সালকিয়া" সাথে সকলের পরিচয় করানোই "Our সালকিয়া" পেজের অন্যতম উদ্দেশ্য।"সালকিয়া" ভাবছেন কোথায় এ জায়গা? আসুন আপনাকে নিয়ে যাই আধুনিকতার মোড়কে ইতিহাসের ছোঁয়া লাগানো হাওড়া শহরের এই শতবর্ষ প্রাচীন জনপদে।সালকিয়ায় আপনাকে সুস্বাগতম।


আসুন আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিই হাওড়া জেলার শতাব্দী প্রাচীন জনপদে "সালকিয়া" সাথে। হুগলী নদীর তীরবর্তী এই জনপদটি উত্তরে মালিপাঁচঘড়া,পূর্বে হাওড়া স্টেশন, পশ্চিমে বামুনগাছি ব্রিজ এবং দক্ষিণে পিলখানা অবধি বৃস্তিত।
সালকিয়া নামটির আদি বানান শালকিয়া ছিল। সালকিয়া নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ভিন্ন রকম জনশ্রুতি রয়েছে। যেমন -
এক),একসময় এখানে অসংখ্য শালিক পাখির বাসা ছিল সেই থেকে এই নামের উৎপত্তি।দুই),বাঁধাঘাটে বর্মা থেকে শাল কাঠ বোঝাই করা নৌকা আসতো সেই থেকে এই নামের উৎপত্তি। তিন),একসময় এখানে অসংখ্য জলাভূমি ছিল সেখানে শালুক ফুল ভরে থাকতো (প্রখ্যাত গবেষক ডঃ সুকুমার সেনের মত অনুসারে) সেই থেকে এই নামের উৎপত্তি।
নবাবী আমলে সালকিয়ার গুরুত্ব ছিল ভীষন। এখন যেটা 'পিলখানা' নামে পরিচিত সেটি নবাব নিজামের আমলে হাতিশাল ছিল। আবার এখন যেটা 'গোলাবাড়ি' নামে পরিচিত সেটি ইংরেজদের নুনের গোলা ছিল।
Firstcry [CPS] IN
সালকিয়াতে কিছু মহান মানুষের পদধূলিতে ধন্য হয়েছিল।
১৯৩৯ সালে সালকিয়ার জটাধারী পার্কের সভায় সুভাষ চন্দ্র বসু এসেছিলেন। ওই সভায় যে চেয়ারটিতে বসছিলেন আজও সযত্নে রক্ষিত আছে ডঃ তুলসী দাস চট্টোপাধ্যায়-রা পুত্র বিমল কুমার চট্টোপাধ্যায়-রা বাড়িতে।এই সভাতে সালকিয়ার বিখ্যাত কবি ব্রজমোহন দাস ' বন্দেমাতরম' গেয়েছিলেন। ১৯৪১ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু ইংরেজ পুলিশদের চোখে ধুলো হাওড়া ব্রিজ পার করে জি.টি ধরে সালকিয়া চৌরাস্তা হয়ে গোমো স্টেশন পৌঁছন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন করার পর মাস্টারদা ইংরেজ পুলিশদের চোখে ধুলো দিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন সালকিয়ার বাবুডাঙ্গার মনা খাঁ 'র বাড়িতে।
ঈস্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিবারে সাথে সালকিয়ার যোগাযোগ লোক মুখে প্রচলিত আছে , এমন কি শোনা যায় তাঁর ঠাকুমার অন্তর্জলী এই বাঁধাঘাটে সম্পন্ন হয়েছিল।
১৯২৫-২৬ সালে বাবুডাঙ্গার চরণ মল্লিকের বাড়িতে গান বাজনার আসরে কাজী নজরুল ইসলাম আসতেন।
Firstcry [CPS] IN
শ্রী শীতলা মাতার স্নান যাত্রা সালকিয়া শতাব্দীপ্রাচীন উ૮সব। মাঘ মাসের মাঘি পূর্ণিমার দিবসে হয় শ্রী শ্রী শীতলা মাতার স্নান যাত্রা।স্নান যাত্রার দিবসে সব শীতলা মাতাদের মন্দির থেকে পালকি সাজাইয়া গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাত্তয়া হয়। দুপুরে শীতলা মাতাদের সুসজ্জ পালকি করে আনা হয়। আগে মাত্র ৭টি শীতলা মাতা আসতেন, আর এখন সংখ্যা ৬০ পার করে যায় । নিয়ম আছে যে সব মায়েদের পর “বড় মা” আসবেন। সারা রাত শীতলা মাতার পুজ হয়। দন্ডি কেটে মানসিক পুর্ণ করেন বহু মানুষ। এই স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে অগণিত ভক্তের সমাগম ঘটে। মা'কে দর্শন করেন। তার পরের দিন “সোলো আনা পুজো” হয়।সোলো আনা পুজো দিয়ে প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন।
সালকিয়াতে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে যার মধ্যে প্রাচীনতম সালকিয়া এ এস হাই স্কুল, যা ১৮৫৫ সালে স্থাপিত।
এছাড়াও এমন কিছু সালকিয়াবাসী আছেন যারা নিজেরাই বিশ্বের কাছে সালকিয়ার নাম উজ্জ্বল করেছেন, সেই কয়েকজন হলেন গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ,সুরকার অনল চট্টোপাধ্যায় , জাতীয় ক্রিকেটার লক্ষ্মী রতন শুক্লা, এশিয়াড সোনাজয়ী কন্ট্রাক্ট ব্রিজ খেলোয়াড় শিবনাথ দে সরকার , প্রমুখরা।
Firstcry [CPS] IN
সালকিয়ার ইতিহাস সালকিয়ার ইতিহাস Reviewed by Speak In on January 11, 2019 Rating: 5

1 comment:

  1. এককালের বিখ্যাত, পেটের অব্যর্থ ওষুধ, কুমারেশ টনিকের স্বত্ত্বাধিকারী রমণীমোহন (ভোলা) মিত্রের পরিবারের কেউ কি এখনও আছেন সালকিয়াতে?
    সালকিয়া ঘোষাল বাগান লেনের প্রখ্যাত মানুষ, গুণী সেতারী, শ্রদ্ধেয় ডাক্তার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অতি উচ্চপদস্থ অধিকারী এবং বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল, ডাক্তার সুধাংশু কুমার উপাধ্যায় সম্বন্ধে কেউ কিছু জানাতে পারেন?

    সালকিয়া থেকে প্রকাশিত, অধুনালুপ্ত "যুগচিত্র"পত্রিকা এবং তার সম্পাদক ভারতকুমার গাঙ্গুলি সম্বন্ধে সালকিয়া নিবাসী কারুর কিছু জানা আছে কি?

    ReplyDelete

Powered by Blogger.